বন্ধু-সহকর্মীদের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলার সময় হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন পল্লব বসু বাপ্পি। দ্রুত তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। ততক্ষণে ওপারে পাড়ি জমান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এ শিক্ষার্থী।
গত ২০ ডিসেম্বর পল্লব বসু বাপ্পির অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নামে বন্ধু, সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের মাঝে। এক সপ্তাহ পর সেই শোক যেন আরও গাঢ় হলো। এবার পল্লবের জন্য কাঁদছেন নেটিজেনরাও।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) ৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এতে প্রশাসন ক্যাডারে ২৮তম হয়েছেন পল্লব বসু বাপ্পী, যা আরও পীড়া দিচ্ছে পল্লবের শুভাকাঙ্ক্ষীদের।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন তার পরিচিতজনরা। যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পল্লব বসু ৪০তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ পেয়ে ভোলার লালমোহনের শাহবাজপুর কলেজে অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। ৪১তম বিসিএসে খাদ্য ক্যাডারে তিনি সুপারিশপ্রাপ্ত হন। সবশেষ ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। তবে সেই ফলাফল জানার আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন পল্লব।
পল্লবের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, পল্লব বসু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অর্থনীতি বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সেখান থেকে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। গত ২০ ডিসেম্বর ব্যাডমিন্টন খেলার সময় বুকে ব্যথা অনুভব করেন। পরে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।
এদিকে, পল্লব বসুর প্রশাসন ক্যাডারে ২৮তম হওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন তার সহকর্মী রহিম রানা। ফেসবুকের পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের পল্লব বসু বাপ্পি ৪৩তম বিসিএসে অ্যাডমিন ক্যাডারে ২৮তম হয়েছে। তার রেজাল্ট দেখে আমাদের বুকটা ফেটে যাচ্ছে।’
ফলাফল ও পল্লবের ছবি দিয়ে বানানো একটি ফটো কার্ডও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘মৃত্যু কতই না নিকটবর্তী…। সপ্তাহখানেক আগেই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করা পল্লব বসু (খুবি অর্থনীতি ১৪তম ব্যাচ) ৪১তম বিসিএস থেকে খাদ্য ক্যাডার এবং আজ ৪৩তম বিসিএস থেকে প্রশাসন ক্যাডারে ২৮তম হয়েছেন।’
পল্লব বসু বাপ্পির ফেসবুক আইডিতে ঢুকলেই চোখে পড়ছে একটি পোস্ট। তাতে তিনি লিখেছিলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় ৪১তম বিসিএস হতে খাদ্য ক্যাডারে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম৷ আমি মানুষটা সর্বদা পছন্দের খাবার খেতে ও খাওয়াতে ভালোবাসি। সহকারি খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে এখন দেশের হাজারো সাধারণ মানুষের জন্য সুষ্ঠুভাবে খাদ্য সরবরাহের দায়িত্ব মাথায় এলো। এই সামান্য অর্জনের পুরো কৃতিত্ব আমার পরিবার, আত্মীয়জন ও বন্ধুমহলের যারা সর্বদা আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছেন৷ আশীর্বাদ করবেন যেন এই চলার পথের সর্বশেষ গন্তব্য এটাই না হয়।’
আশীর্বাদ চেয়ে প্রশাসন ক্যাডার ঠিকই হয়েছেন পল্লব বসু। তবে ইহলোকে তার গন্তব্য শেষ হয়েছে খাদ্য কর্মকর্তা হিসেবেই।
পাঠকের মতামত